4993047 Times Visited
A_Ahmed
Jul ২০, ২০২২
কোভিড অভিজ্ঞতাঃ
কোভিড – ১৯, ২০১৯ এর ডিসেম্বরে শুরু হয়ে এখন ও চলছে। অধুনা চলছে কোভিডের চতুর্থ ঢেউ। এর আদৌ কোন শেষ আছে কিনা কে জানে?
গোটা বিশ্বকে টালমাটাল করে এখনো চলছে কোভিডের তাণ্ডব। পৃথিবী জুড়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ৬৪ লক্ষ মানুষ। যারা কখনো কোভিডে আক্রান্ত হননি তারা সৌভাগ্যবান। কোভিড এক গোলক ধাঁধা। এর মোড় কোন দিকে ঘুরবে তা বুঝে উঠা খুব কঠিন। এই ভাইরাস যার শরীরে একবার বাসা বেঁধেছে তাকে নাস্তানাবুদ করে তবেই ছেড়েছে।
আমি কোভিডে আক্রান্ত হই ২০২০ এর নভেম্বরে। তেমন কোন উপসর্গ না থাকার পরে ও আমাকে ভুগতে হয়েছে অনেক দিন। শুরুটা হয়েছিল হাঁটু ব্যাথা দিয়ে, তারপর জ্বর ও শরীর ব্যাথা। আমার গলা ব্যাথা বা তেমন কোন কাশি ও ছিলনা। কিন্তু শরীর আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে থাকা তো দূরে থাক বসে ও থাকতে পারতাম না। শরীর প্রচন্ড দূর্বল ও শুধু কাঁপ তো। চিকিৎসা সঠিক ভাবেই হয়েছিল, কিন্তু ভোগান্তির শেষ ছিলনা। সাথে ছিল আতংক কখন কি হয়ে যায়। প্রায় একমাস ভোগার পর সুস্থ্য হলে ও শারীরিক দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছে প্রায় ৫ মাস। কিন্তু সেই যে হাঁটু ব্যথা শুরু হল তা আর ভালো হলনা। এখনো চলছে এবং মনে হচ্ছে দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি কোভিড কালীন সময়ে আরেক আতংক আইসোলেশন। যদি ও এ ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু আইসোলেশন কোভিড আক্রান্তকে অনেক বেশি ভঙ্গুর করে ফেলে মানসিক দিক দিয়ে। নানা রকম উপসর্গ সপ্তাহের পর সপ্তাহ থেকে যাচ্ছে অনেকের। ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ন সেরে উঠেও কর্মক্ষম হতে পারছে না অনেকেই।
ইতালির এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়া প্রতি ১০ জনের ৯ জনই কোভিড থেকে সেরে উঠার পরও কমপক্ষে একটা উপসর্গে ভুগছে ৬০ দিন পরেও। সমীক্ষায় দেখা যায় ৩২% এর ১/২ টা এবং ৫৫% এর ৩ বা ততোধিক উপসর্গ কোভিড নেগেটিভ হয়ার পর ও বিদ্যমান থাকে। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, জয়েন্ট ব্যথা,বুকে ব্যথা, মাংস পেশীর ব্যথা,ঝাপসা চিন্তা( Brain Fog),স্মৃতি ভ্রম,মনোসংযোগের অভাব, ডিপ্রেশন, মানসিক সমস্যা, চুল পড়া ইত্যাদি। কোভিড সার্ভাইভারদের থেকে যাওয়া সমস্যা গুলো হলো শ্বাসের সমস্যা, অতিরিক্ত দুর্বলতা,মাংসপেশির শিথিলতা, নিত্যদিনের কাজ-কর্ম করতে সমস্যা, মানসিক সমস্যা- PTSD (Post Traumatic Stress Disorder), উদ্বিগ্ন থাকা, ডিপ্রেশন ইত্যাদি।
যারা দীর্ঘসময় কোভিড পরবর্তী উপসর্গে ভুগছেন তাদের ডাক্তার, ফিজিওথেরাপি, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অনেক ক্ষেত্রেই দরকার হতে পারে। ব্যায়াম, সামাজিক যোগাযোগ, বিশ্রাম,নিজেকে কোন কিছু করার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দেয়া, পুষ্টিকর খাবার, প্রচুর পানি ও তরল খাবার খুব গুরুত্বপূর্ন।
আশার বাণী, কোভিড টীকা মৃত্যু হার কমিয়েছে, যদিও টিকা নেওয়ার পরে কোভিড় হওয়া বন্ধ করতে পারেনি। এখন ও আবিষ্কৃত হয়নি কোভিড ভাইরাসের পরিপূর্ন ম্যাকানিজম। বিজ্ঞানীগণ গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। হয়ত খুব বেশি দূরে নয় সেদিন যখন আমরা কোভিড জয় করে ফেলব।
আলাউদ্দিন আহমেদ