1873 Times Visited
A_Ahmed
সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২
ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যঃ
ক্যাডেট কলেজ সামরিক বাহিনী পরিচালিত বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সামরিক বাহিনীতে যোগ্য কর্মকর্তা তৈরির চেতনা থেকে ক্যাডেট কলেজ ধারণার সৃষ্টি হয় । .প্রতিবছর সারা দেশে থেকে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীরা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার জন্য ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ন হয়। ক্যাডেট কলেজে কড়া নিয়ম কানুনের মধ্যে ছাত্র- ছাত্রীরা এমন সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে যা অন্য কোথাও চিন্তাই করা যায়না।
ক্যাডেট কলেজের সংখ্যাঃ
দেশে মোট ১২টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে ৯টি ছেলেদের জন্য এবং ৩টি মেয়েদের জন্য। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ দেশের প্রথম ক্যাডেট কলেজ এবং জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ সর্বশেষ স্থাপিত ক্যাডেট কলেজ। ক্যাডেট কলেজ সমুহে ৭ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেনি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হয়।
ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবিধা সমুহঃ
ক্যাডেট কলেজে পড়ার মাধ্যমে ছাত্র- ছাত্রীরা সকল দিক দিয়ে এগিয়ে যায়। অত্যন্ত সুন্দর মনোরম পরিবেশে বৃহৎ পরিসরে ক্যাডেট কলেজের ক্যাম্পাস গুলো অবস্থিত। পড়াশোনা, খেলাধুলা, ক্রীড়া, বিতর্ক, আবৃত্তি, নাট্যাভিনয় করা, সঙ্গীত চর্চ, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত ও কুরআন তিলওয়াত সকল কিছুর জন্যই রয়েছে পর্যাপ্ত সুবিধা। পাঠ্যবইবহির্ভূত শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম দেয়ার লক্ষ্যে রয়েছে ইনফরমেশন রুম ও মিউজিয়াম। লাইব্রেরিতে আছে সৃজনশীল সাহিত্য পাঠের ব্যবস্থা। ক্যাফেটেরিয়া, কম্পিউটার ল্যাব, আর্ট গ্যালারি, হাসপাতাল, মসজিদ, জিমনেশিয়াম, ট্রেনিং গ্রাউন্ড, সুইমিংপুল, মেটাল ও উড ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন ধরনের খেলার মাঠও আছে। সৃজনশীলতা চর্চায় দেয়াল পত্রিকা বের হয় নিয়মিত। ক্যাডেট কলেজে ফজর নামাজের মাধ্যমে দিন শুরু হয়, এশার নামাজের মাধ্যমে দিন শেষ হয়। অসাধারণ এক শৃঙ্খলাবদ্ধ আনন্দময় জীবন। বিষয় ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষকগণ প্রতিটি বিষয়ে পাঠ দান করে থাকেন। কোন বিষয় কোন শিক্ষার্থীর বুঝতে অসুবিধা হলে তাকে অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ক্যাডেট কলেজে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে, মানসম্মত উপায়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। যা শিক্ষার্থীকে দারুনভাবে আকর্ষণ করে। ক্যাডেট কলেজের সুবিধাগুলো যদি আমরা সংক্ষিপ্ত ভাবে দেখি তাহলে তা নিম্নরুপ
• উন্নততর শিক্ষাদান পদ্ধতি
• প্রশস্ত ক্যাম্পাস
• হোস্টল সুবিধা
• নিজস্ব ডাইনিং সুবিধা
• বিভিন্ন রকম স্পোর্টসের সুবিধা
• এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিসের পর্যাপ্ত সুবিধা
• নিজস্ব হাসপাতাল সুবিধা
• লাইব্রেরী ও আধুনিক ল্যাব সুবিধা
• লেখাপড়া শেষে শুধুমাত্র ISSB তে অবতীর্ন ও উত্তীর্ণ হয়ে হয়ে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের সুযোগ
এসমস্ত সুযোগ- সুবিধার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর কিছু গু্নাবলী দারুণভাবে বিকশিত হয়, যেমনঃ
ক্যাডেট কলেজে ভর্তির যোগ্যতাঃ
বাংলাদেশের নাগরিক ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যেকোন শিক্ষার্থীই ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে পারে। ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখা শুরু হয় সপ্তম শ্রেণি থেকে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং ছেলেমেয়ে উভয়েরই উচ্চতা থাকতে হবে নূ্ন্যতম ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি। ইতিমধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি এমন শিক্ষার্থীরা আবেদনের অযোগ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন বর্ণান্ধ , অতিরিক্ত ওজন এবং বিভিন্ন রোগ যেমন এজমা, মৃগী, হৃদরোগ, বাত, যক্ষ্মা, পুরনো আমাশয়, হেপাটাইটিস, রাতকানা, ডায়াবেটিসসহ আরও কয়েকটি রোগে আক্রান্ত কেউ আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হবেননা।
পরীক্ষার মাধ্যমঃ
বাংলা ও ইংরেজি, এ দুটি মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়া যায়। তবে প্রার্থীকে যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিতে হবে।
পরীক্ষার মানবণ্টনঃ
ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ও নম্বর বণ্টনে কিছু পরিবর্তন সংযোজন করে থাকেন। ২০২২ সালের সার্কুলার অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার নম্বর বন্টন নিম্নরূপঃ
মোট ৩০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিঃ
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা থেকে একটু ভিন্ন। এ কারণেই এই পরীক্ষার পড়াশোনা ও মানসিক প্রস্তুতি একটু আলাদা। ক্যাডেট কলেজে ভর্তিচ্ছু একজন শিক্ষার্থীর উচিত ক্লাস সিক্সের শুরু থেকেই একটু একটু করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। ১২ টি ক্যাডেট কলেজে প্রতি বছর ৬০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তাই এ পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে দরকার দীর্ঘ প্রস্তুতি, কঠোর অধ্যবসায় ও সঠিক গাইডলাইন।
ক্যাডেট কলেজে পড়ার খরচঃ
ক্যাডেট কলেজে কোন ভর্তি ফি নেই। এখানে পড়ালেখার মাসিক খরচ নির্ধারণ হয়, পিতা-মাতার আয়ের উপর। অভিভাবকদের আয়ের ওপর ভিত্তি করে এখানে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও থাকা-খাওয়ার খরচ ধার্য করা হয়। সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বনিন্ম ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের সর্বনিন্ম ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ফি দিতে হয়। পিতা বা অভিভাবক শিল্পপতি হলে মাসিক ফি সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে টিশন মওকফের সুবিধা ও আছে।
পরিশেষেঃ
উন্নততর জীবন গঠন ও শিক্ষালাভের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ক্যাডেট কলেজ সমুহ। আশা করব ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমুহ ও একই ধারার শিক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষার্থীদের একই ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে সচেষ্ট হবে।