1486 Times Visited
A_Ahmed
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২
গণিত এবং অঙ্কশাস্ত্রে অনেক ধারা বা সংখ্যা সিরিজ রয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে সরল, অত্যাশ্চর্য্য এবং রহস্যময় মজার সিরিজ বা ধারাটি হল ফিবোনাক্কি সিরিজ। ফিবোনাক্কি সিকোয়েন্স হল পূর্ণসংখ্যার একটি সেট (ফিবোনাক্কি সংখ্যা) যা একটি শূন্য দিয়ে শুরু হয়, তারপর এক, তারপরে আরেকটি এক এবং তারপর ক্রমাগতভাবে ক্রমবর্ধমান সংখ্যার একটি সিরিজ। ক্রমটি নিয়ম অনুসরণ করে যে প্রতিটি সংখ্যা পূর্ববর্তী দুটি সংখ্যার যোগফলের সমান। এই সিরিজের প্রতিটি সংখ্যা তার পরবর্তী দুইটি সংখ্যার বিয়োগফলের সমান।
যেমন - ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯,১৪৪……………………।
ফিবোনাক্কি সংখ্যাগুলিকে ভারতীয় গণিতে প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল, ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রথম দিকে। পিঙ্গলা নামে একজন ভারতীয় গণিতবিদ দুটি দৈর্ঘ্যের সিলেবল থেকে গঠিত সংস্কৃত কবিতার সম্ভাব্য প্যাটার্ন নির্ণয় করার কাজে প্রথম এই সিরিজের সংখ্যাগুলোর ব্যবহার করেন। তবে এই সিরিজকে ব্যাপকভাবে ইউরোপীয়দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ইতালির পিসার গণিতবিদ Leonardo Pisano Bogollo। তার ডাক নাম ছিল "Fibonacci" এবং ডাক নাম অনুসারেই এই সিরিজটিকে নামকরন করা হয় ফিবোনাচ্চি সিরিজ বা ফিবোনাক্কি সিরিজ রূপে। তার মতে সৃষ্টির মূল রহস্য লুকিয়ে আছে এ রাশিমালায়।
"Fibonacci” ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে খরগোশের প্রজননে প্রথম এই সিরিজটির অস্তিত্ত্ব লক্ষ্য করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যদি দুটি খরগোশ থেকে প্রজনন হয় এবং একটি খরগোশ ও মারা না যায়, তাহলে ১০ মাস পর খরগোশের সংখ্যা হয় ৫৫টি ১১ মাস পর ৮৯টা এবং ১২ মাস পর হবে ১৪৪ টা।
আমাদের চারপাশে প্রকৃতিতে অদ্ভুতভাবে সব কিছুতে ফিবোনাক্কি সিরিজের অস্তিত্ত্ব খ্যজে পাওয়া যায়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব ফুলের পাপড়ি বিন্যাসে এই নিয়ম খুজে পাওয়া যায়। ফলেও ফিবোনাক্কি সংখ্যা দেখা যায়। এক সারিতে আনারসের ৮ টি কিংবা ১৩ টি চোখ থাকে।
পাখিরা যখন দলবেঁধে আকাশে উড়ে, প্রতিটি দলে ১৩ টা বা ২১ টা বা ৩৪ টা বা ৫৫টা বা ফিবোনাক্কি সিরিজের পরবর্তী কোন সংখ্যক পাখি থাকে। অর্থাৎ ফিবোনাক্কির সংখ্যানুযায়ী এরা দলে বিভক্ত থাকে। যদি কোন কারনে দলে পাখি কমে যায় তাহলে এরা দল ভেঙ্গে আবার ফিবোনাক্কি সংখ্যানুযায়ী দলবদ্ধ হয়। সত্যিই রহস্যময়।
১ম কিছু ফিবোনাক্কি সংখ্যা বাদ দিলে পাশাপাশি দুটি ফিবোনাক্কি সংখ্যার যদি পরেরটাকে আগেরটা দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে ভাগফল হয় ১.৬১। ৩৯ তম ফিবোনাক্কি সংখ্যা থেকে এই রেশিওটি ধ্রুব। যেমন ৩৭৭ কে ২৩৩ দ্বারা ভাগ করলে অথবা ৬১০ কে ৩৭৭ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল ১.৬১ পাওয়া যায়। একে বলা হয় গোল্ডেন রেশিও। মানবদেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গে এই গোল্ডেন রেশিওর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। একটা অঙ্গের দৈর্ঘ্যকে ১.৬১ দ্বারা গুণ করলে আরেকটা অঙ্গের দৈর্ঘ্যের সমান হয়। দেহের সম্পূর্ন দৈর্ঘ্য ও নাভির নিচ থেকে বাকি অংশের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১। কাধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ও হাঁটু থেকে পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত দূরত্বের অনুপাত ১.৬১। ঠোটের দৈর্ঘ্য ও নাকের প্রস্থের অনুপাত ১.৬১। সম্পূর্ণ হাত এবং বাহুর দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১। সম্পূর্ণ মানব দেহে তিন শতাধিকের বেশি গোল্ডেন রেশিও খুজে পাওয়া যায়।
এছাড়াও ও প্রকৃতিতে অসংখ্য জিনিষে গোল্ডেন রেশিওর ছড়াছড়ি। ফুলের ভেতর প্রতি স্তরের রেনুর সাথে পরের স্তরের রেনুর অনুপাত ১.৬১। একটা মৌচাকে স্ত্রী মৌমাছি ও পুরুষ মৌমাছির অনুপাত ১.৬১।
কি অদ্ভুত রহস্যময় জটিল খেলা। মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, 'নিশ্চয় আকাশ-জমিন, সৃষ্টি ও রাতদিন বিবর্তনের মাঝে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।' (সূরা আলে ইমরান : ১৯০)।